Union Budget Outcome: ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট আজ সংসদে পেশ করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এই বাজেটে বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও বরাদ্দের ঘোষণা করেছেন, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।
আয়কর কাঠামোতে পরিবর্তন:
মধ্যবিত্ত শ্রেণির করদাতাদের স্বস্তি দিতে আয়কর কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৭,০০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২,৮০,০০০ টাকা করা হয়েছে, এবং এই সীমার উপরে আয়ের জন্য করের হারও হ্রাস করা হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলি মধ্যবিত্তের ব্যয়ক্ষমতা বাড়াবে এবং অর্থনীতিতে চাহিদা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
কৃষি খাতে উদ্যোগ:
কৃষি খাতের উন্নয়নে বাজেটে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ফসল উৎপাদন বাড়াতে ১.৭ কোটি কৃষকের জন্য একটি জাতীয় মিশন শুরু করা হয়েছে। এছাড়া, কৃষকদের জন্য ভর্তুকিযুক্ত ঋণের সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা কৃষি উৎপাদন ও কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন:
স্বাস্থ্য খাতে, দেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালে ডে কেয়ার ক্যান্সার সেন্টার স্থাপনের ঘোষণা করা হয়েছে, যা ক্যান্সার রোগীদের জন্য উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবে। এছাড়া, ৩৬টি জীবনরক্ষাকারী ক্যান্সার ওষুধের উপর শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে, যা রোগীদের আর্থিক বোঝা কমাবে।
পরিবেশ ও সবুজ প্রযুক্তি:
পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে, বৈদ্যুতিক যানবাহন (EV) উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্যাটারি উৎপাদনের মূল উপকরণগুলির উপর শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটি দেশের সবুজ অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
উদ্যোগ ও স্টার্টআপ:
উদ্যোগ ও স্টার্টআপ খাতের উন্নয়নে বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন উদ্যোগ ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রণোদনা ও সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া, পর্যটন ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও সহায়তা করবে।
আর্থিক শৃঙ্খলা ও রাজস্ব ঘাটতি:
সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব ঘাটতি জিডিপির ৪.৪% এ নির্ধারণ করেছে, যা পূর্ববর্তী বছরের ৪.৮% থেকে কম। ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ফলে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হবে, যা মেটাতে সরকার ১৪.৮২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এছাড়া, ২০৩১ সালের মধ্যে ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৫০% এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেটের প্রতিক্রিয়া:
বাজেট ঘোষণার পর বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। মুডি’স-এর ক্রিশ্চিয়ান ডি গুজম্যান রাজস্ব বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যদিও মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধির প্রশংসা করেছেন। ভলভো ইন্ডিয়ার কামাল বালি ব্যক্তিগত করদাতাদের সঞ্চয় বৃদ্ধির ফলে ব্যয় বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করেছেন। অ্যাপোলো হাসপাতালের প্রীথা রেড্ডি স্বাস্থ্য খাতে নেওয়া পদক্ষেপগুলির প্রশংসা করেছেন।
সার্বিক মূল্যায়ন:
সামগ্রিকভাবে, বাজেটটি মধ্যবিত্তের কর হ্রাস, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন, সবুজ প্রযুক্তির প্রসার এবং উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপ খাতে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, রাজস্ব ঘাটতি ও ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টি নজরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ হবে।